সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত

বর্তমানে বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে সাজেক ভ্যালি। অনেকেই এটি সম্পর্কে শুনেছেন বা কিছুটা জানেন কিন্তু জানেন না সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত এবং কিভাবে সেখানে ভ্রমণে যাওয়া যায়? তাই আজকের আর্টিকেলে জানাবো সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত এবং সেখানে কিভাবে যাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত
তাই যদি আপনারা সেখানে ভ্রমনে যেতে চান এবং জানতে চান সাজেক ভ্যালি কিভাবে যাওয়া যায়, সাজেক ভ্যালি কোন বিভাগের আওতায় পড়ে অথবা সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন। এখানে আমরা এই পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পেজ সূচিপত্রঃসাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত

ভূমিকা

সাজেক ভ্যালি তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। পাড়া তিনটি হল হামারী পাড়া, কংলাক পাড়া এবং রুইলুই পাড়া। রুইলুই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে এবং এটি ১৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে। কংলাক পাহাড়ের ১৮০০ ফুট উচ্চতায়  কংলাক পাড়া অবস্থিত। এখানে মূলত তিনটি উপজাতি এর বসবাস। এগুলো হচ্ছে ত্রিপুরা, লুসাই এবং পাংখোয়া।
এখান থেকে রাঙ্গামাটির প্রায় অনেকটা অংশই দেখতে পাওয়া যায়। আর এই জন্যই রাঙ্গামাটির ছাদ বলা হয় এই ভ্যালিকে। সাজেক ভ্যালি নামটি এসেছে কর্ণফুলী নদী থেকে উৎপন্ন সাজেক নদী থেকে। অপূর্ব  সৌন্দর্যে ঘেরা এই জায়গাটি। চোখ জুড়িয়ে যাবার মতো মনোরম ও সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। সাদা রঙের মেঘ এবং সবুজে ঘেরা পাহাড় দেখে যে কারোরই মন প্রফুল্ল হয়ে যায়।

সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত এবং এর কিছু তথ্য

রাঙ্গামাটি জেলার উত্তরে ভারতের মীজোরাম সীমান্তে অবস্থিত এই সাজেক ভ্যালি। এই  ভ্যালির নামকরণ করা হয়েছে কর্ণফুলী নদী থেকে উৎপন্ন সাজেক নদীর নাম অনুসারে। রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন হচ্ছে সাজেক।

প্রায় ৭০০ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে স্থান দখল করেছে এই ইউনিয়নটি। এটির উত্তরে রয়েছে ত্রিপুরা, দক্ষিণে রয়েছে রাঙ্গামাটি জেলার লংগাডু উপজেলা, পূর্বে রয়েছে ভারতের মিজোরাম এবং পশ্চিমে রয়েছে খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলা। রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এটি দেখতে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় গেলে সুবিধা।

এই উপত্যকা খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় .৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, ৩৪ কিলোমিটার বাঘাইহাট থেকে এবং ৪৯ কিলোমিটার দিঘীনালা থেকে। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র।

সাজেক ভ্যালি যাওয়ার সময় যেসব চোখে পড়বে

দুর্গম এলাকায় অবস্থিত হলেও এই উপত্যকা দেখতে প্রতিবছর অনেক মানুষ এখানে আসে। এর মনোরম সৌন্দর্যে সবাই বিমোহিত হয়। রাঙ্গামাটির ছাদ এবং পাহাড়ের রানী বলা হয় আমাদের এই সাজেক ভ্যালিকে। আমাদেরকে সেখানে যেতে হলে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প দিয়ে যেতে হবে। সেখানে যাওয়ার সময় আমরা দেখতে পাবো বাঘাইহাট পুলিশ এবং আর্মি ক্যাম্প। সেখানে যাওয়ার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই এই আর্মি ক্যাম্পের অনুমতি নিতেই হবে।

এরপর আমরা দেখতে পাবো মাচলং বাজার এবং টাইগার টিলা আর্মি ক্যাম্প। এই মাচলং বাজার পার করলেই আমাদের চোখে পড়বে রুইলুই পাড়া। ১৮০০ ফুট উচ্চতা এই রুইলুই পাড়ার এবং এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে। সাজেক উপত্যকা রুইলুই পাড়া থেকে অনেক কাছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম বিজিবি ক্যাম্প গুলোর মধ্যে সাজেক বিজিবি ক্যাম্প একটি।

সাজেক ভ্যালির সুন্দর পর্যটন স্পট

এখানে খুব সুন্দর সুন্দর পর্যটন স্পট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কমলক ঝর্না অন্যতম এবং এটি দেখার জন্য আপনাকে রুইলুই পাড়া থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে হবে। পিদাম তোয়াশা ঝর্না বা সিকাম তোয়াশা ঝর্না নামেও পরিচিত এই কমলক ঝর্না। কংলাক পাড়া হচ্ছে সাজেকের শেষ গ্রাম এবং এটি লুসাই সম্প্রদায় নামেও পরিচিত। ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় এই কংলাক পাড়া থেকে যেখান থেকে উৎপত্তি হয়েছে কর্ণফুলী নদীর।
অনেক সময় নিরাপত্তার কারণে বিজিবি ক্যাম্প থেকে কংলাক পাড়ায় যেতে দেওয়া হয় না। এখান থেকে ফেরার পথে আমাদের চোখে পড়ে দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ, দীঘিনালা বনবিহার, আলুটিলা গুহা এবং হাজারচোরা ঝর্ণা। এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বা এই ভ্যালির অপরূপ সৌন্দর্যের জন্যই এটি একটি অন্যতম পর্যটন স্পট বা ছুটি কাটানোর অন্যতম একটি জায়গা।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ একটি অপরূপ স্থান, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পাহাড়ি পরিবেশ আপনাকে অভিনব অভিজ্ঞতা দেয়। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের জন্য নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

ভ্রমণের সময় নির্ধারণঃ সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের আগে ভ্রমণের সময় নির্ধারণ করুন। সকালে ভ্রমণ শুরু করার সুপ্ত সময়টি আপনার সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে সহায়ক হতে পারে।

ভ্রমণের পরিকল্পনাঃ আগে থেকে ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন। কোথায় যাবেন, কোন দর্শনীয় স্থান দেখবেন, খাবারের ব্যবস্থা কীভাবে করবেন ইত্যাদি পরিকল্পনা করুন।

স্থানীয় পরিবেশ ও মানুষঃ সাজেকে আপনি স্থানীয় পরিবেশ এবং মানুষের সাথে আমল হবেন। এটি আপনার অভিজ্ঞতা আরো মজার ও দুর্লভ করতে সাহায্য করবে।

প্রাকৃতিক দৃশ্যঃ সাজেকে অবশ্যই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করুন। এখানে প্রাকৃতিক ঝর্ণা, বন, ও পাহাড়ের মধ্যে সুন্দর দৃশ্য আছে।

ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত পোশাকঃ সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের জন্য পোশাক পরিধান করুন যা আপনাকে সঠিক অবস্থায় রাখতে সাহায্য করবে।

নিরাপত্তাঃ ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা বিষয়টি মেনে চলুন। নিজেকে ও আপনার পরিবারকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রধান নির্দেশিকা মেনে চলুন।

স্থানীয় খাবারঃ সাজেকে স্থানীয় খাবার চেষ্টা করুন। স্থানীয় খাবার আপনার ভ্রমণকে আরো মজাদার করতে সাহায্য করবে।

ক্যামেরা ও মোবাইল চার্জারঃ ভ্রমণের জন্য নিজের ক্যামেরা আর মোবাইল চার্জার নিতে না ভুলুন। এটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।

সাজেকে ভ্রমণ করার জন্য এই টিপসগুলি অনুসরণ করলে আপনি আরো সুন্দর ও অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।

সাজেক ভ্যালি কিভাবে যাব এবং সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ

সেখানে যাওয়ার সময় খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা দিয়ে গেলে অনেক সুবিধা হয়। সুতরাং আমরা প্রথমে খাগড়াছড়ি যাব। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য আপনি অনেকগুলো পাশ পাবেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শ্যামলী পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, ঈগল পরিবহন, এস আলম পরিবহন এবং শান্তি পরিবহন। আপনি যদি নন এসি বাসে যেতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে প্রায় .৫২০ টাকা।

আর আপনি যদি এসি বাসে বা বিআরটিসিতে বা সেন্টমার্টিন পরিবহনে যেতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে প্রায় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। এছাড়া শুধুমাত্র শান্তি পরিবহনই একমাত্র পরিবহন যেটি সরাসরি দীঘিনালায় যায় এবং এর খরচও মাত্র .৫৮০ টাকা। বিভিন্ন পয়েন্টে এই বাসটির কাউন্টার রয়েছে। আপনি যদি ছুটির দিনে সেখানে যেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই অগ্রিম টিকিট কেটে রাখতে হবে।

কেননা ছুটির দিনে টিকিট পাওয়াটা খুবই মুশকিল। যেহেতু এই জায়গার দূরত্ব খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার তাই আপনাকে সেখানে যাওয়ার জন্য জীপ গাড়ি রিজার্ভ করে যেতে হবে। যাওয়ার ভাড়া এবং আসার ভাড়া এই দুইটা মিলে আপনার খরচ হবে প্রায় ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকা। একটি জীপ গাড়িতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ জন যাওয়া সম্ভব।

যদি আপনার গ্রুপ ছোট হয় তাহলে আপনি অন্য গ্রুপের সাথে যোগ দিয়ে একসাথে একটি জীপ গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। সিএনজি দিয়েও সেখানে যাওয়া সম্ভব কিন্তু সেখানকার রাস্তা গুলো আঁকাবাঁকা এবং খাড়া হওয়ায় সিএনজিতে না যাওয়ায় ভালো।

শেষ কথাঃ সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত

কমবেশি আমাদের সবারই ঘুরতে বা ভ্রমন করতে ভালো লাগে। বাংলাদেশের ভ্রমণ করার মত অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো সাজেক ভ্যালি। সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত, সেখানে আমরা কিভাবে যেতে পারি এবং সেখানে যাওয়ার জন্য কি রকম খরচ হবে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল।
আশা করি এই আর্টিকেল পড়ে এই ভ্যালি সম্পর্কে এবং এখানে গেলে কিভাবে কি করতে হবে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়েছেন। যদি আর্টিকেলটি পরে আপনাদের ভালো লাগে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আপনারা ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

চাঁপাই আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url