গাজরের অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ
সুপ্রিয় পাঠকগণ, আপনারা কি গাজরের অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে
চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা গাজরের
অসাধারণ স্বাস্থ্য পুষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। তাই গাজরের অসাধারণ
স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানার জন্য এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
আমরা জানি গাজরে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে গাজরে কি
কি ধরনের স্বাস্থ্য ও কোন কোন ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত
জানবো।
পেজ সূচিপত্রঃ গাজরের অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ
- ভূমিকা
- গাজরের অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ
- গাজর খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- গাজরের প্রধানত কি পাওয়া যায়
- গাজরের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান
- গাজরের মধ্যে কোন ভিটামিন বেশি থাকে
- গাজরের মধ্যে কোন অ্যাসিড থাকে
- দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে গাজরের উপকারিতা
- গাজর খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- শেষ কথাঃ গাজরের অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ
ভূমিকা
গাজরের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Daucus Carota। এটি একটি মূল জাতীয় সবজি এবং এটি
Apiaceae পরিবারভুক্ত গাছ। গাজরকে সুপার ফুড বলা হয়। বিশেষ করে শীতকালে বিভিন্ন
ধরনের সাধারণ রোগ থেকে মুক্তি পেতে সবচাইতে ভালো সবজি হচ্ছে এই গাজর। এটিতে
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি
করে, সর্দি, ঠান্ডা ও কাশি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম
গাজরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ ও রক্ত শুদ্ধিকরণে সাহায্য
করে। এটি আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও গাজরে আরো অনেক ধরনের স্বাস্থ্যগুণ ও পুষ্টিগুণ
রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে জানার জন্য এই আর্টিকেলটি মনোযোগের সাথে পড়ুন।
গাজরের অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ
গাজর একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ সবজি। এটি সাধারণত শীতকালে চাষ করা
হয়ে থাকে। কিন্তু এখন আমরা প্রায় সারা বছরই এই সবজি পেয়ে থাকি। গবেষণায় দেখা
গেছে যে, প্রতি ১০০গ্রাম গাজরে প্রায় ৩৩ শতাংশ ভিটামিন এ পাওয়া যায়, ৯ শতাংশ
পাওয়া যায় ভিটামিন সি, এবং পাঁচ শতাংশ পাওয়া যায় ভিটামিন বি ৬।
এছাড়াও গাজরে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। গাজরে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হার্টকে সুস্থ রাখতে
সাহায্য করে। এই উপাদানগুলো হার্টের ধমনীকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
এটির ফলে ধমনীতে কোন ধরনের আস্তরণ জমা হয় না। ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত গাজর খাওয়ার ফলে স্তন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার
ইত্যাদি হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
গাজর খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গাজর সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যোপযোগী খাদ্য হওয়ার কারণে অনেকেই এটি অনেক বেশি
পরিমাণে গ্রহণ করে থাকেন। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকা
উচিত। কেননা এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
যেমনঃ-
ত্বকের রং পরিবর্তনঃ গাজরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন।
এটি ভিটামিন এ এর ঘাটতি দূর করে থাকে। কিন্তু আপনি যদি এটি অনেক বেশি পরিমাণে
গ্রহণ করেন তাহলে এটি আপনার ত্বকের রং পরিবর্তন করে ফেলতে সক্ষম।
গাজর থেকে এলার্জি হতে পারেঃ আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন
তাহলে আপনাকে গাজর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা গাজরে প্রচুর পরিমাণে সুগার
থাকে। ফলে এটি গ্রহন করার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।
দাঁতের ক্ষয়ঃ অতিরিক্ত গাজর খাওয়ার ফলে ত্বকের রং হলুদ হয় এবং শিশুদের
দাঁতের ক্ষয় হয়।
এছাড়াও অতিরিক্ত গাজর খাওয়া আপনার দেহে ক্যালসিয়াম,আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম,দস্তা
ইত্যাদি শোষণে বাধার সৃষ্টি করে এবং পেটে গ্যাস, ডায়রিয়া ইত্যাদি পাঁচনজনিত
ব্যাধির সৃষ্টি করে। এগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত গাজর খাওয়ার ফলে মহিলাদের বুকের
দুধের স্বাদের পরিবর্তন হয়ে থাকে।
গাজরের প্রধানত কি পাওয়া যায়
গাজরে প্রধানত বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টিকর উপাদান পাওয়া যায়। প্রতি ১০০
গ্রাম কাঁচা গাজরে পাওয়া প্রধান পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিনের একটি তালিকা নিম্নে
দেওয়া হলো।
- কার্বোহাইড্রেট ৯ গ্রাম
- চিনি ৬ গ্রাম
- ফ্যাট ০.২ গ্রাম
- প্রোটিন ১ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ২.৪ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ৩৬ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ২৪০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি ০.০৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ২, ২০.০৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ্৩,১.২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৪,৬২.০১ মিলিগ্রাম
- সুগার ৪.৭ গ্রাম
- বিটা ক্যারোটিন৮২৮৫ মাইক্রগ্রাম।
গাজরের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান
আমরা জানি গাজর একটি সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবার। তবে এর মধ্যে কোন কোন ধরনের
পুষ্টিগুণ আছে সেগুলো আমরা অনেকেই জানিনা। গাজরে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান
রয়েছে। গাজর ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন
রয়েছে যা শরীরে ভিটামিনের কাজ করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে খাদ্য শক্তি রয়েছে ৫৭ কিলো ক্যালরি, স্নেহ ০.২ গ্রাম,
খনিজ ০.৯ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৯ গ্রাম, ক্যারোটিন ১০৫২০
মাইক্রগ্রাম, লৌহ ২.২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭মিলিগ্রাম,আঁশ ২.৮ গ্রাম। এছাড়াও
গাজরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনও রয়েছে।
গাজরের মধ্যে কোন ভিটামিন বেশি থাকে
গাজর আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি উপকারী সবজি। গাজর ত্বকের কোষের বৃদ্ধি ও
পুনর্জন্মে সাহায্য করে। ত্বকের বলি রেখা,ব্রণ, ছোপ ছোপ দাগ ইত্যাদি দূর করতে
সাহায্য করে। গাজর চুল পড়া কমায় এবং চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে। নিয়মিত
গাজর গ্রহণ জন্ডিস প্রতিরোধ করে।
আর এ সব কিছুই সম্ভব হয় গাজরে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদানের
জন্য। গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য উপাদান রয়েছে। গাজরে
ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি.২, ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন বি ৪ এবং ভিটামিন সি
পাওয়া যায়। তবে এই ভিটামিন গুলোর মধ্যে গাজরে ভিটামিন এ সবথেকে বেশি পরিমাণে
পাওয়া যায়।
গাজরের মধ্যে কোন অ্যাসিড থাকে
গাজরের মধ্যে থাকে এসকরবিক এসিড। এটি আমাদের কাছে ভিটামিন সি নামে পরিচিত। এটি
শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য অনেক
উপকারী। এক কথায় সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে হলে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব ও
প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ভিটামিন সি শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীরের শক্তি
বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুনঃ মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
ভিটামিন সি এর অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। কোন কাজ করতে বসলে সেই কাজে মনোযোগ
দিতে পারা যায় না। শরীর অসহ্য লাগে এবং বিভিন্ন ধরনের বিরক্তি অনুভব হয়।
ভিটামিন সি এসব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের ওজন কমাতে
সাহায্য করে। তাই আমাদের সকলের উচিত নিয়মিত গাজর খাওয়া।
দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে গাজরের উপকারিতা
আপনারা জানেন বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
এগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে চোখের সমস্যা। এখানে আমরা এমন কয়েকটি সুপার
ফুড সম্পর্কে বলবো, যেগুলো আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে অনেক সাহায্য
করবে। চোখকে ভালো রাখার জন্য গাজরের নামই সবার আগে মাথায় আসে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অনুযায়ী গাজরে থাকা ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন
চোখের জন্য উপকারী। গাজরের কমলা রঙের জন্য দায়ী বিটা ক্যারোটিন। ভিটামিন এ
দৃষ্টিশক্তি মজবুত করতে অত্যান্ত উপযোগী। এটি একটি রোডোপ্সি্ন নামক প্রোটিনের
ঘটক, যা রেটিনাকে প্রকাশ শোষণে সাহায্য করে। এজন্য উচিত প্রতিদিন গাজর খাওয়া।
গাজর খাওয়ার সঠিক নিয়ম
পুষ্টি বিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে রান্না করা ও কাঁচা গাজরের
পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলা হয় এতে বিটা ক্যারোটিন থাকে যাকে ক্যারোটিনয়েড বলা হয়।
রান্না করলে এটা আরো ভালোভাবে শরীরে শোষিত হয়। গাজর খাওয়ার কিছু টিপস ও সতর্কতা
নিচে উল্লেখ করা হলো।
টিপস
- গাজর খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত
- গাজর কাঁচা খাওয়ার সময় খোঁসা ছাড়িয়ে খাওয়া উচিত
- এটি বেশিক্ষণ ধরে রান্না করা ঠিক নয়
- গাজর দিয়ে খাবার তৈরি করার পর এটি ঠান্ডা করে খাওয়া উচিত
সতর্কতা
- অতিরিক্ত পরিমাণে গাজর খাওয়া ঠিক নয়। এর ফলে শরীরে ভিটামিন এ এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- গাজর খাওয়ার পরে সূর্যের আলোতে গেলে ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শেষ কথাঃ গাজরের অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ
আজকের এই আর্টিকেলে গাজরের অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত
বর্ণনা করা হল। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জানার ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছে।
আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
আরো পড়ুনঃ ক্যাপসিকাম খাওয়ার নিয়ম
এটি যদি আপনাদের কোন উপকার করে তাহলে এটিকে সবার সাথে শেয়ার করুন। আর্টিকেলটি
সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
চাঁপাই আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url