লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
আপনি কি গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
সম্পর্কে জানতে চাইছেন? তাহলে আপনাকে স্বাগতম জানাই। আজকের আর্টিকেলে গরু বা
মহিষের লাম্পিং স্কিন ডিজিজের লক্ষণ, কিভাবে ছড়ায, প্রতিকার এবং চিকিৎসা
সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি। স্কিন ডিজিজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি
মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
খুরা রোগের তুলনায়, লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি অনেক বেশি ভয়ঙ্কর রোগ হিসাবে
গণ্য হতে পারে। যা একটি খামারীকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। তাই
আজকের আর্টিকেলে লাম্পি স্কিন ডিজিজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
- ভূমিকা
- লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ কি
- লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ
- লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ কিভাবে ছড়ায়
- লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের প্রতিকার
- লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের চিকিৎসা
- লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের পরামর্শ
- শেষ কথাঃ লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
ভূমিকা
বর্তমানে বাংলাদেশে কিছু কৃষক বাণিজ্যিকভাবে গরু বা মহিষের খামার গড়ে তুলেছেন।
আগে কৃষকেরা এ সকল পশুর যত্ন কীভাবে নিতে হতো তা জানতেন না। তবে আধুনিকতার ফলে
তারা বিভিন্ন মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে পারছেন। এতে অন্তত এদের
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরো পড়ুনঃ ঠোটের কালো দাগ দূর করার ক্রিম
মানুষের রোগ-বালাই এর মতই পশু-পাখিরও রোগ-বালাই আছে। বর্তমানে গরু, মহিষের এক
ভয়াবহ রোগ দেখা দিয়েছে, যা লাম্পি স্কিন ডিজিজ নামে পরিচিত। এই রোগটি পশুকে
আক্রমণ করলে সে সহজেই মৃত্যুর মুখে পড়ে যেতে পারে। তাই গবাদি পশুকে লাম্পি
স্কিন ডিজিজ থেকে রক্ষা করতে আর্টিকেলটি পুরোটাই পড়ুন।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ কি
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ হল একটি ভাইরাস জনিত চর্মরোগ, যা গরু এবং মহিষকে
আক্রান্ত করে। এই রোগে পশুর চর্মে ফোসকা বা গুটি উঠে এবং ক্ষত হয়। এই রোগ
মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং খুব দ্রুত বিস্তার হয়। এই রোগের ফলে
গরুর দুধ ও মাংস উৎপাদন কমে যায় এবং অনেক সময় মৃত্যু হয়।
আরো পড়ুনঃ জার্মানিতে যেতে কত টাকা লাগবে
ফলে গরু পালনের সাথে যুক্ত সকল ব্যক্তি এবং কৃষি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হতে
পারে। বিশেষভাবে, প্রান্তিক খামারিরা এই রোগের মারাত্মক প্রভাবের শিকার হতে
পারে। এছাড়া, দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হিসেবে গর্ভপাত এবং অনুর্বরতা প্রতিষ্ঠার
ঝুঁকি রয়েছে।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ
"লাম্পি স্কিন ডিজিজ" এর মূল লক্ষণ হলো প্রাণীর গায়ে ফোসকা দেখা। এছাড়াও, এই
রোগের অন্যান্য লক্ষণ হতে পারে। নিচে লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণসমূহ
উল্লেখ করা হলো।
- গরুর তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় এবং জ্বর থাকে।
- নাক, চোখ ও মুখ দিয়ে পানি পড়ে এবং লালা বের হয়।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া ফুলে এবং গুটি উঠে। গুটিগুলো ফেটে ক্ষত হয় এবং পুঁজ বের হয়।
- লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে এবং ব্যথা হয়।
- দুগ্ধবতী গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায়।
- খাবারে অরুচি হয় এবং শক্তি কমে যায়
যদি আপনার পাশের প্রাণীতে এই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে তা নিশ্চিতভাবে
একজন ভেটেরিনারীর সাথে যোগাযোগ করা উচিত যাতে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা যায়।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ কিভাবে ছড়ায়
"লাম্পি স্কিন ডিজিজ" বা এলএসডি রোগ ছড়ানোর মূল কারণ হলো এলএসডি ভাইরাসের
ছড়ানো। এই ভাইরাস মুখের অংশ, কানের পিছনের অংশ, গা, লাম্পি এবং অন্যান্য
শরীরের অংশে থাকতে পারে। এলএসডি রোগের ছড়ানোর মূল উপায় সাধারণত নিম্নলিখিত
হতে পারে।
- এক খামার থেকে অন্য খামারে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এমনকি এক দেশ থেকে অন্য দেশে গরু নিয়ে যাওয়া। এতে ভাইরাস অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- মশা, মাছি, আঠাঁলি ও অন্যান্য কীট-পতঙ্গের মাধ্যমে কাছাকাছি স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পশুর দেহ থেকে রক্ত পান করে এই কীট-পতঙ্গরা ভাইরাস বহন করে।
- আক্রান্ত গরুর লালা, দুধ, সিমেন ও ক্ষতের মাধ্যমে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- আক্রান্ত গরুর পরিচর্যা করার পর ঐ পোশাকে সুস্থ্য গরুর কাছে যাওয়া যাবে না।
- আক্রান্ত গরুর পরিচর্যার জন্য ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, কাপড়, ব্রাশ ও অন্যান্য সামগ্রী অন্য গরুর কাছে ব্যবহার করা যাবে না।
- সংক্রামিত প্রাণীর যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে এলএসডি রোগ ছড়াতে পারে।
এই কারণের মধ্যে যে কোনও একটি এলএসডি ভাইরাসের সাথে সংস্পর্শে আসলে, এই রোগটি
ছড়াতে পারে। প্রতিষ্ঠানে এলএসডি ভাইরাসের ছড়ানো রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর
প্রতিরোধ তৈরি করতে মানকল্যাণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের প্রতিকার
"লাম্পি স্কিন ডিজিজ" বা এলএসডি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিকার নিতে নিম্নলিখিত
পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
- আক্রান্ত গরুকে আলাদা করে রাখুন এবং তাদের পরিচর্যা করার সময় সতর্ক থাকুন।
- আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত LSD ভ্যাকসিন দিন, যদি সহজলভ্য হয়।
- আক্রান্ত গরুর ক্ষতস্থানে ফ্লাই রিপেলেন্ট বা অ্যান্টিসেপ্টিক লাগান।
- আক্রান্ত গরুর দুধ, লালা, সিমেন বা ক্ষতের সংস্পর্শ এড়ান।
- আক্রান্ত গরুর জন্য ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, কাপড়, ব্রাশ বা অন্যান্য সামগ্রী অন্য গরুর জন্য ব্যবহার করবেন না।
- খামারের ভিতর ও চারপাশ পরিস্কার পরিছন্ন রাখুন এবং মশা-মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করুন।
- নতুন গরু খামারে আনার সময় তাদের পরীক্ষা করে নিন এবং যদি কোনো লক্ষণ দেখা যায় তাহলে তাদের আলাদা করে রাখুন।
এই রোগের চিকিৎসা না করলে গরুর মৃত্যু হতে পারে বা দুধ ও মাংস উৎপাদন কমে
যেতে পারে। তাই এই রোগের প্রতি সচেতন থাকুন এবং যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে
দ্রুত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা রেজিস্ট্রার্ড প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের চিকিৎসা
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের চিকিৎসা একটি সমস্যামূলক বিষয়, কারণ এই রোগ ভাইরাস
দ্বারা সৃষ্টি হয় এবং এর বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট ঔষধ বা ভ্যাকসিন নেই। তবে
কিছু প্রাথমিক ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিলে এ রোগের প্রভাব কমানো যায়। এই
ব্যবস্থা হলোঃ
- আক্রান্ত প্রাণীর জ্বর ও ব্যথা উপশমের জন্য প্যারাসিটামল বা অন্য কোনো অ্যান্টিপাইরেটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ দেয়া যেতে পারে।
- আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষতস্থানে ফ্লাই রিপেলেন্ট বা অ্যান্টিসেপ্টিক লাগানো যেতে পারে।
- আক্রান্ত প্রাণীর শরীরের নিম্নাংশে ফুলে পানি জমা হলে ডাইউরেটিক হিসাবে লুমিক্স বা অন্য কোনো ঔষধ দেয়া যেতে পারে।
- আক্রান্ত প্রাণীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বায়োলাক্ট বা অন্য কোনো ইমিউনোমডুলেটর ঔষধ দেয়া যেতে পারে।
- আক্রান্ত প্রাণীর সাথে সুস্থ্য প্রাণীর সংস্পর্শ এড়ানো এবং আক্রান্ত প্রাণীকে আলাদা করে রাখা উচিত।
- আক্রান্ত প্রাণীর জন্য মশারির ব্যবস্থা করা এবং মশা-মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
- আক্রান্ত প্রাণীর দুধ, লালা, সিমেন বা ক্ষতের সংস্পর্শ এড়ানো এবং আক্রান্ত প্রাণীর জন্য ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, কাপড়, ব্রাশ বা অন্যান্য সামগ্রী অন্য প্রাণীর জন্য ব্যবহার করা না।
- খামারের ভিতর ও চারপাশ পরিস্কার পরিছন্ন রাখা এবং প্রাণীর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
এই রোগের চিকিৎসা না করলে গরুর মৃত্যু হতে পারে বা দুধ ও মাংস উৎপাদন কমে
যেতে পারে।
তাই এই রোগের প্রতি সচেতন থাকুন এবং যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে দ্রুত
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা রেজিস্ট্রার্ড প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের পরামর্শ
সাধারণত, ২১ দিন পরে রোগটি সমাপ্ত হয়ে যায়। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ
রোগের স্পষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। এর বিষয়ে সচেতনতা প্রচার করা এবং প্রতিরোধ
করা প্রাধান্যমূলক। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রয়োজন হলে অ্যান্টিপাইরেটিক
এবং অ্যান্টিহিস্টামিন এর ব্যবহার করা হতে পারে।
যখন নড়া বা গুটি ফেটে যায় বা দ্বিতীয়ক ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণের সঙ্গে
সহযোগিতা করে, তখন সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হতে পারে।
এছাড়াও, গুটিতে মশা-মাছি প্রবেশ বন্ধ করতে ফ্লাই রিপেলেন্ট ব্যবহার করা হতে
পারে। নিচে লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।
- এই রোগের প্রতি সচেতন থাকুন এবং আপনার গরুদের নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
- এই রোগের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা রেজিস্ট্রার্ড প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- এই রোগের প্রতিরোধে আপনার গরুদের LSD ভ্যাকসিন দিন, যদি সহজলভ্য হয়।
- আক্রান্ত গরুকে আলাদা করে রাখুন এবং তাদের পরিচর্যা করার সময় সতর্ক থাকুন।
- আক্রান্ত গরুর দুধ, লালা, সিমেন বা ক্ষতের সংস্পর্শ এড়ান।
- আক্রান্ত গরুর জন্য ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, কাপড়, ব্রাশ বা অন্যান্য সামগ্রী অন্য গরুর জন্য ব্যবহার করবেন না।
- খামারের ভিতর ও চারপাশ পরিস্কার পরিছন্ন রাখুন এবং মশা-মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করুন।
- নতুন গরু খামারে আনার সময় তাদের পরীক্ষা করে নিন এবং যদি কোনো লক্ষণ দেখা যায় তাহলে তাদের আলাদা করে রাখুন।
সমস্যা হলে, দ্রুত একজন প্রাণীর চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদের
নির্দেশনা অনুসরণ করুন। তাদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করার জন্য সাধারণত সঠিক
চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে প্রাণীর স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব।
শেষ কথাঃ লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি রোগ
সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এলএসডি রোগের লক্ষণ,
প্রতিরোধ এবং প্রতিকার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেছি। আশা করি
আজকের আর্টিকেলটি গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের চিকিৎসায় সহায়তা
করবে।
আরো পড়ুনঃ মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
আজকের আর্টিকেল সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন পরামর্শ বা মতামত থাকে তাহলে
কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করে সবাইকে
জানানোর সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ!
চাঁপাই আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url