ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে বিস্তারিত জেনে নিন

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এ সম্পর্কে কি আপনার ধারনা নেই? ডেঙ্গু সাধারণত মশার কামড়ের কারণে হয়ে থাকে। যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছে এবং রক্তচাপ কমে যাচ্ছে। আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করব ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত। ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে বিস্তারিত জেনে নিনবর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। আমাদের সাধারণ জ্বর হলেই খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হয় সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগ। এ অবস্থায় খাবারের প্রতি অনীহা অনেক বেশি তৈরি হয় তাই আজকের পোস্টটিতে আমরা ডেঙ্গু হলে কি খেতে হবে এ সম্পর্কে পুরো আলোচনা করার চেষ্টা করব।

পেজ সূচিপত্রঃ ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

  • ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
  • ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়
  • ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ
  • ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না
  • শেষ কথা

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন অনেকেই। দুশ্চিন্তা হবারই কথা, কারণ ডেঙ্গু জ্বর হলে খাবারের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়। তাই এমন খাবার আপনি খাবেন যা কম পরিমাণে খেলেই আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে। অর্থাৎ যে খাবারগুলোতে অধিক পরিমাণে ক্যালরি পাওয়া যায় সে খাবারগুলো আপনি খাবেন। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার গুলো হল-পায়েস, মিষ্টি দই, ডালের খিচুড়ি, ফিরনি, পুডিং এবং মিল্ক সেক।
দিনে দিনে ডেঙ্গু জ্বরের অবস্থা খুব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে যে লক্ষণ গুলো দেখা দিচ্ছে সেগুলো হল, প্রেসার অর্থাৎ রক্তচাপ কমে যাচ্ছে, হঠাৎ করে রোগী অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিডনি। ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত রোগী বাড়িতে অবস্থান করলে তার খেয়াল একটু বেশি রাখা উচিত। সাধারণ জ্বর হলে দেখা যায় খাবারের প্রতি অরুচি ও অনীহা আসছে।

সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত রোগীর খাবারের প্রতি অনীহা আরও অনেক বেশি। এ সময় রোগীর খাবারের প্রতি অনীহা থাকার কারণে তার শরীরে ক্যালরি এবং পুষ্টির মাত্রা অনেক কমে যায়। তাই তার শরীরে তাপমাত্রা বজায় রাখতে তার প্রয়োজন অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার এবং পুষ্টির। নিচে আলোচনা করা হলো ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে বা কোন ধরনের খাবার গুলো খাওয়া প্রয়োজন।

তরল খাবারঃ ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে ওঠার জন্য আমাদের শরীরের জন্য তরল খাবার অপরিহার্য । তরল খাবারের মধ্যে যেগুলো পড়ে সেগুলো হল তাজা ফলে শরবত, স্যুপ এবং পানি। এ সমস্ত কিছু মিলে সারা দিনে প্রায় তিন লিটার তরল খাবার খেতে হবে। আপনার শরীরের পানি-শূন্যতা রোধ করতে প্রতি তিন ঘন্টা পর পর পানি খাবেন।

নরম খাবার: ওখানে আমরা বলেছি ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত হলে আমাদের শরীরে ক্যালরি পরিমাণ কমে যায় সাথে পুষ্টি ও কম পাওয়া যায়। তরল খাবারের মাধ্যমে শরীরের পানি শূন্যতা পূরণ হয় কিন্তু এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি না থাকার কারণে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি থাকে। তাই রোগীকে ক্যালারি পূরণের জন্য নরম খাবার দিতে হবে। যেমন সুজি, মাছ, নরম ভাত ও সাগু ইত্যাদি। এবং অধিকারী যুক্ত খাবার গুলো হলো দই, খিচুড়ি, পুডিং , পায়েস, ফিরনি , মিল্কশেক।

ডেঙ্গু জ্বরের সময় আমাদের শরীরে আরো ঘাটতি পরে প্রোটিনের। তাই এই সময় আমাদের প্রোটিনের বেশি প্রয়োজন। যে সমস্ত খাবারগুলোতে প্রোটিন বেশি পাওয়া যায় সে ধরনের খাবারগুলো রোগীকে খাওয়াবেন। যেমন মুরগি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী শরীরে হিমোগ্লোবিন ও প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়। তাই শরীরে প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন আয়রনযুক্ত খাবার। অর্থাৎ সে ধরনের খাবার গুলো যেগুলো খেলে শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যাবে। আয়রন যুক্ত খাবার গুলো হল-কলিজা, ডালি্‌ ডিম, খেজুর,সবুজ শাকসবজি, জলপাই, কিসমিস,মিষ্টি কুমড়ার বিচি ইত্যাদি।

ডেঙ্গুজরে আক্রান্ত ব্যক্তির আরো প্রয়োজন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার। ভিটামিন সি এর মধ্যে টক জাতীয় খাবার গুলোর তালিকাভুক্ত করা উচিত এগুলো রোগীর জন্য খুব উপকারী।

আরো একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির পাতলা পায়খানা বমি হয় তাহলে ডাল দুধ জাতীয় খাবার গুলো রোগীকে দিবেন না এ সময় নরম জাতীয় খাবারগুলো রোগীকে দিবেন সাথে তরল খাবার গুলো দিতে পারেন।

একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আপনি উপরোক্ত খাবার গুলো খাওয়াবেন অর্থাৎ এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়

দিন দিন ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। মূলত ডেঙ্গু জ্বর হয় এডিস মশার কামড়ে। তাই ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয় কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে জরুরী ভিত্তিতে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নঃ মূলত দেখা যায় এডিস মশা ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। ময়লা বা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে এদের দেখা যায় না। তাই আপনার বাড়ির চারপাশের জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে যেন সেখানে এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে। আপনার বাড়ি সহ চারপাশে মশা মারার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সময়ঃ দেখা যায় এডিস মশা মূলত সকালবেলা ও সন্ধ্যার সময় কামড়ায়। তবে রাতে এডিস মশা কামড়াই না বিষয়টা এমন না। যথেষ্ট পরিমাণ আলো পেলে অর্থাৎ উজ্জ্বল আলোতে এ মশা কামড়াতে পারে। তাই রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করবেন। বাইরে থেকে মশা ভিতরে ঢুকতে না পারে এজন্য আপনি আপনার জানালায় নেট লাগাতে পারেন। এবং রুমে স্প্রে ও কোয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

বংশবিস্তারঃ এডিস মশা সাধারণত দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানিতে ডিম পারে না অর্থাৎ ময়লাযুক্ত পানি দ্বারা বংশবিস্তার করে না। তাই আপনার বাড়ির আশেপাশের জায়গা এবং ঘরে ব্যবহৃত ফুলদানি বা এমন ধরনের পাত্র যেগুলোতে মশা ডিম পাড়তে পারে এগুলো কয়েকদিন পর পর পরিবর্তন করে নিবেন। যার ফলে কোন মশা ডিম পেড়ে থাকলে তার লার্ভা গুলো মারা যাবে। বাথরুমে পানি জমা রাখবেন না।

ছাদঃ প্রায় মানুষেরই বাড়ির ছাদে বাগান করে থাকেন। ছাদ বাগানে পানি বেশি দিন ধরে জমা রাখবেন না। ছাদ বাগানটি প্রায় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন।

নিচে আরও কিছু তথ্য দেওয়া হল যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারেন।


  • দুই সময়ে মশা কামড় থেকে সাবধান থাকার চেষ্টা করুন। সকালে সূর্যোদয়ের আধা ঘন্টা পরে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধা ঘন্টা আগে। মূলত এ সময় এডিস মশা কামড়ে থাকে।
  • ঘুমানোর আগে মশারি টাঙ্গার অভ্যাস করুন বিশেষ করে বর্ষাকাল সময়টাতে। অনেক সময় দেখা যায় মশা রাতেও কামড়ায়। তাই মশা কামড়ানো নিরোধক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
  • মশার স্প্রে ব্যবহার করুন বাড়ি অফিস আদালত সমস্ত জায়গায় মশার স্প্রে ব্যবহার করা উচিত।
  • বাড়ির আশেপাশে তুলসীর গাছ লাগাতে পারেন। তুলসী গাছে রয়েছে অনেক উপাদান যা মশা তাড়াতে সাহায্য করে।
  • আপনি মশা তাড়ানোর জন্য কর্পূর ব্যবহার করতে পারেন। কর্পূর মশা তাড়ানোর জন্য খুব কার্যকরী। রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে রুমের মধ্যে কর্পূর জ্বালিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন মশা চলে গেছে।
উপরোক্ত পদক্ষেপ গুলো অবলম্বন করলে আপনি ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগ। তাই আমাদের সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি উপরে জানতে পেরেছেন ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এবার আমরা আলোচনা করব ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ কি না।

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ

আমরা অনেকেই ভেবে থাকি ডেঙ্গু হল একটি ছোঁয়াচে রোগ। কিন্তু আসলে এ কথাটি কি সত্য? চলুন জেনে নিই ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ কি না? ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ না এটি হল সংক্রামক রোগ। সংক্রামক রোগ তিনভাগে ছড়িয়ে পড়ে তা হল-

  • মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে
  • প্রাণী থেকে প্রাণীদের ছড়িয়ে পড়ে এবং
  • প্রাণী থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে
ডেঙ্গু হয় মূলত এডিস মশার কামড়ে। অর্থাৎ মশার কামড়ের ফলে মানুষের ভিতরে যে ভাইরাস সংক্রমিত হয় যার কারনে ডেঙ্গু হয়ে থাকে। তাই বলা যায় ডেঙ্গু হলো সংক্রামক রো।

ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না

ডেঙ্গু জ্বর হলে আমাদের শরীরে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই এই সময় রোগীর খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি সকল ধরনের খাবার খাবেন না। এসময় রোগের ক্যালরিযুক্ত খাবার এবং পুষ্টিগত খাবার খাওয়া উচিত। এবং যে ধরনের খাবারগুলো খাওয়া উচিত না সেগুলো নিচে দেওয়া হল-
  • অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার খাবেন না এটি পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর।
  • অতিরিক্ত চিনি ও লবণ যুক্ত খাবার খাবেন না।
  • ভাজাপোড়া ও ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • অতিরিক্ত শক্ত খাবার খাবেন না।
  • কাঁচা খাবার বা কাঁচা সবজি এড়িয়ে চলুন ।
  • দুধ-চা ও কফি এ ধরনের খাবার খাবেন না।
  • ড্রিংকস জাতীয় খাবার খাবেন না এটি আপনার সুস্থ হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।

শেষ কথাঃ ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

মূলত ডেঙ্গু এখন একটি ভয়াবহ রোগের নাম। বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছে। তাই আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আপনি ডেঙ্গুজরে আক্রান্ত হলে ভয় পাওয়ার কিছু নাই কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করুন। ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নিয়ে সে খাবারগুলো খাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত না সেগুলো এড়িয়ে চলুন।

আপনার নিজেকে এবং পরিবারকে সুস্থ রাখার জন্য বাড়ি এবং বাড়ি চারপাশ পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

চাঁপাই আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url