পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ - পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

প্রিয় পাঠকগণ, আপনি ইন্টারনেটে এ পেট ব্যাথা কিসের লক্ষণ ও পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু আপনি কাঙ্খিত উত্তর পাননি। তাই আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ, পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় ও মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কিসের লক্ষণ সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার পর পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ ও পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনার আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।
পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ - পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
এই আর্টিকেলটিতে পেট ব্যাথা নিয়ে আরো অনেক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যেমন হঠাৎ পেট ব্যথা হলে করণীয় কি এবং গ্যাস্ট্রিক থেকে কি পেটব্যথা হয় চলুন এ সকল সমস্যার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

পেজ সূচিপত্রঃ পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ - পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

ভূমিকা

বাঙালি ভোজন রসিক। আমরা সবাই খেতে ভালবাসি। কিন্তু হঠাৎ করে যদি হয় পেট ব্যথা তাহলে খাবারের সব আনন্দই মাটি। সর্দি কাশির মতো পেটব্যথা আমাদের একটি কমন সমস্যা। পেট ব্যথায় ভোগেনি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। পেটব্যথা আমাদের বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ সময়ে অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে বা বদহজমের পেট ব্যাথা হয়ে থাকে।
তাই এই আর্টিকেলটিতে আরো আলোচনা করেছি পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ, পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়, পেট ব্যথা হলে কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত নয়। আরো আলোচনা করা হয়েছে পেটের মাঝখানে ব্যথার কারণ সমূহ কি বুকের নিচেও পেটের উপরে ব্যথার ঘরোয়া সমাধান কি। এ পর্বটি নিচে এ সকল সমস্যা সমাধানের ঘরোয়া উপায় ও লক্ষণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 

পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ

অধিকাংশ সময় পেট ব্যথা গুরুতর রোগের কারণে হয় না। তবে পেট ব্যথা অনেক কারণে হতে পারে ব্যথা নেই চিন্তিত হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। নিচে পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

গ্যাসের ব্যথাঃ আমাদের শরীরে গ্যাস নির্গমন এর চেয়ে বেশি পরিমাণে যদি গ্যাস উৎপন্ন হয় তাহলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের সেই গ্যাস জমতে থাকে। এই থেকে আমাদের পরিপাক ক্রিয়া ব্যাহিত হয়ে পেট ব্যথা শুরু হতে পারে। গ্যাসের ব্যথা খুব কম সময় পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। ধীরে ধীরে কমে যায় গ্যাসের ব্যথা। তবে অতিরিক্ত ব্যথা হলে এবং সেই ব্যথা স্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

অম্বলের ব্যথাঃ পেট ও বুকের মধ্যখান জ্বালা ভাব অনুভব করা হলো অম্বলে ব্যথা। আপনি যদি মাঝে মাঝে অম্বলে ব্যথায় ভোগেন তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বদহজমের কারণে ব্যথাঃ খাওয়ার পর পেট ফেপে আছে এমন হওয়া বুক জ্বালাপোড়া ও বমি বমি ভাব আসা হলো বদ হজমের লক্ষণ। আমাদের পরিপাক তন্ত্রের খাদ্যগ্রহণ ও হজমের ক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমাণে খাবার খেলে এই বদহজম হতে পারে।

কিডনিতে ব্যথাঃ পেট বা পিঠের একপাশে তীব্র ব্যথা হওয়া প্রসবের সময় ব্যথা অনুভব করা এবং মাঝে মাঝে বমি আসলে এটি কিডনিতে ব্যথার লক্ষণ। এ ধরনের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে আপনি চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

প্যানক্রিয়াটাইটিসঃ পেটের মাঝামাঝি অংশের তীব্র ব্যথা এবং সাথে বমি ভাব আসলে প্যানক্রিয়াটি সমস্যা হতে পারে।

অ্যাপেন্ডিসাইডঃ পেটের ডান দিকে নিচের অংশে হঠাৎ তীব্র ব্যথা শুরু হলে এটি অ্যাপেন্ডিসাইড এর লক্ষণ। এবং এই ব্যথা হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

পিত্তথলিতে ব্যথাঃ পেটের মাঝখানে বা ডান পাশে ঠিক নিচে কয়েক ঘন্টা ধরে প্রচন্ড ব্যথা হলে এটি পিত্তথলিতে ব্যাথার লক্ষণ।

পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

পেট ব্যথা আমাদের সবারই একটি খুব পরিচিত এবং সাধারণ সমস্যা। পেট ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নাই কারণ বেশিরভাগ সময়েই আমাদের পেট ব্যথা গুরুতর না। খাবারের অনিয়ম এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন তেল ভাজা বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার এর কারণে আমাদের পেট ব্যথা হতে পারে। এই আর্টিকেল এর ওপরে জেনেছেন পেটে ব্যথা কিসের লক্ষণ চলুন এবার জেনে নিন পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি।

আদাঃ সৃষ্টির শুরু থেকেই যেকোনো ধরনের ব্যথা বা যেকোনো ধরনের ভূমিকা থামাতে আদার চা খাওয়া হয়। আদাতে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি। বিশেষ করে যখন আমাদের পেটের ভিতরে অনেক জ্বালাপোড়া করে তখন ব্যাথা সৃষ্টি হয় অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি এই প্রবাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই পেটের ব্যথা কমাতে আদা কুচি অথবা আধার চা খেতে পারেন।

কলাঃ কলাতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন ও ফাইবার থাকে। বিশেষ করে কাঁচা কলা ডায়রিয়া রোগের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। কলাতে ফাইবার থাকার কারণে কলা খেলে পেট ব্যথা কমে।

পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতা রয়েছে ব্যথা কমানোর মত এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা পেটের যেকোনো ধরনের ব্যথা ও বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। তাই পেটের ব্যথা ও বমি ভাব কমানোর জন্য চায়ের সাথে পুদিনা পাতা মিশিয়ে অথবা চিবিয়ে খেলে পেটের ব্যথা ও বমি ভাব কমে যাবে। 

ক্যামোমিলঃ ক্যামোমিল এমন একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন চা যা খেলে পেটের যেকোনো ধরনের সমস্যা দূর করে তাই নিয়মিত ক্যামোমিল চা পান করুন।

পিপারমেন্টঃ এটি একটি ভেসেস চা যা কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বদহজমসহ পেটের নানা ধরনের ব্যথা উপশম করে।
 
দইঃ পেটের মধ্যে যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়ার গন্ডগোলের কারণেও পেট ব্যথা হয়ে থাকে দই হয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া যেটি খেলে আপনার পেট ব্যথার ব্যাকটেরিয়ার সমস্যার সমাধান হতে পারে।
এই আর্টিকেলের ওপরে জেনেছেন পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ এবং এর পরবর্তীতে জানলেন পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় চলুন এবার নিচে জেনে নিন হঠাৎ পেট ব্যথা হলে করনীয় কি সম্পর্কে। 

হঠাৎ পেট ব্যথা হলে করণীয়

পেট ব্যথা সমস্যাটি নিয়ে  অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন এবং জানেন না হঠাৎ পেট ব্যাথা হলে করণীয় কি। পেটব্যথা হলো একটি দৈনিক স্বাস্থ্য সমস্যা। পেটব্যথা হলে আগে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি আগে অনুভব করুন আপনার পেট ব্যাথার ধরন কেমন। এবং ব্যথা কোন জায়গায় হচ্ছে এটির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা হয়ে থাকে। পেট ব্যথার বেশিরভাগ সময় গ্যাসের কারণে হয়ে থাকে।
তবে এছাড়াও আরও বেশ কিছু রোগের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে পেট ব্যথা শুরু হয়ে থাকে। যেমন কিডনিতে পাথর বা অ্যাপেন্ডিসাইড এর ব্যথা বা মূত্রনালীতে ইনফেকশনের কারণে পেট ব্যথা হতে পারে। সাধারণ কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখলে আমরা বুঝতে পারবো পেট ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ যেমন অ্যাপেন্ডিসাইড এর ব্যাথা হয় পেটের ডান দিকে নিচের অংশে ও মূত্রনালীতে ইনফেকশনের ব্যথা হয় পেটের নিচ দিকে।

ব্যথা হয় পেটের ডান পাশের পাজরে নিচে। প্যানক্রিয়েটাইটিসের ব্যথা অনুভব হয় পেটের মাঝামাঝি অংশে। এমনকি কিডনিতে ব্যথা হলে আমরা আমাদের পেট বা পিঠের একপাশের তীব্র ব্যথা সাথে পৌঁছাবে ব্যথা অনুভব হয় এবং মাঝে মাঝে বমি আসতে পারে। তবে অবশ্যই একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে পেট ব্যথার সাথে যদি বমি আসে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি আপনাদের গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা থেকে থাকে তাহলে একটি গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নিবেন।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখবেন আপনার ব্যথা কমেছে কিনা বা কোন উপশম হচ্ছে কিনা যদি ব্যথা কমে থাকে তবে আর চিকিৎসকের প্রয়োজন পড়বে না কিন্তু যদি ব্যথা না কমে আরো তীব্র আকার ধারণ করে এবং বমি ভাব আসে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। অথবা নিকট হাসপাতালে যেতে হবে

মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কিসের লক্ষণ

প্রাথমিক অবস্থায় পেট ব্যথা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। তবে অনেক সময় পেট ব্যথা আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই এই পর্বটিতে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কিসের লক্ষণ কেন হয় এবং কি করবেন। 

  • বিশেষ করে মাসিকের সময় মেয়েদের তলপেট ব্যথা হয় তবে এটি একটি খুব স্বাভাবিক সমস্যা। তবে যদি ব্যথাটি তীব্র আকারের হয় তাহলে বুঝতে হবে জড়াতে টিউমার অথবা এন্ডো মেট্রোটিস থাকতে পারে। তবে কিছু সংখ্যক মেয়েদের ডিম্বানু নির্গত হওয়ার সময়ও ব্যথার সৃষ্টি হয়।
  • অনেক সময় জরায়ু বা জরায়ু আশেপাশে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হয় এতে মেয়েদের তলপেট এ ব্যাথা সৃষ্টি হয় এক্ষেত্রে রোগীর জ্বর বা প্রসব বেরিয়ে আসার মত লক্ষণ দেখা যায়।
  • মেয়েদের প্রস্রাবে ইনফেকশন খুব ঘন ঘন হয়। এই ইনফেকশনের কারণে ও তলপেট ব্যথা হতে পারে।
  • এক ধরনের ব্যাথা আছে যা নাভীর চারপাশ ঘিরে সৃষ্টি হয় এবং এটি আস্তে আস্তে পেটের ডান দিকে গিয়ে স্থায়ী হয় সঙ্গে ভূমিও হতে পারে এটিকে বলা হয় অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা। 
যদি আপনার তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা হয় তবে অবশ্যই আপনাকে অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বুকের নিচে পেটের ওপরে ব্যাথা

ইতিমধ্যেই আপনারা জেনেছেন পেট ব্যথার বিভিন্ন ধরনের কারণ। পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ ও পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন পরবর্তীতে জেনে নিন বুকের নিচে ও পেটের উপরে ব্যথা হওয়ার কারণ কি সম্পর্ক। পেটের ওপরে এবং বুকের নিচে ব্যথার প্রধান কারণ হচ্ছে গ্যাস্টিক সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে এটি আলসার থেকেও সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন ধরনের জ্বালাপোড়া যেমন পিত্তথলির প্রদাহ, পাকস্থলীর প্রদাহ এর কারণে পেটের উপরে ও বুকের নিচে ব্যথা হয় যেটা আমরা অনেক সময় গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ধরে ভুল করে থাকি। অনেক সময় আমাদের হাড্ডির সমস্যা থেকেও বুকের নিচে ব্যথা করে থাকে। বুকের নিচে পেটের ওপরে ব্যথা যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন।

শেষ কথাঃ পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ - পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন পেটব্যথা কিসের লক্ষণ ও পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি। সেই সঙ্গে আপনি আরো জানতে পেরেছেন কের নিচে পেটের ওপরে ব্যথার কারণ কি, হঠাৎ পেট ব্যথা হলে করণীয় কি কি।যদি আপনি এখনো পেট ব্যথা কিসের লক্ষণ - পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে না জেনে থাকেন।

তাহলে এই আর্টিকেলটি পুনরায় মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার মূল্যবান মতামতটি কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাদেরকে জানান। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শেষ করছি ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

চাঁপাই আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url